জকিগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে মনোনয়ন যুদ্ধ, জাপায় স্বস্থি, মাঠে স্বতন্ত্ররা

আল হাছিব তাপাদার :: জকিগঞ্জে শুরু হয়েছে তীব্র মনোনয়ন যুদ্ধ। আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে একই চিত্র। দলীয় মনোনয়ন পেতে শেষ সময়ে চলছে জোর চেষ্টা। অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকতে বসে নেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত পৌরসভার তৃতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ জানুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সে হিসেবে চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর মেয়র-কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন।

এর আগেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২৬ অথবা ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

১৯৯৯ সালে কুশিয়ারার তীরে প্রতিষ্ঠিত জকিগঞ্জ পৌরসভায় জমে উঠেছে ভোটযুদ্ধ। এই ভোটযুদ্ধের আগে দলীয় প্রার্থীতার ভোটযুদ্ধ এখন বেশ আলোচিত। শুরু হয়েছে হাইকমান্ডে দৌঁড়ঝাপ। কারা হচ্ছেন রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত প্রার্থী। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কেন্দ্রের দিকে থাকিয়ে আছেন সবাই।

পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা গনসংযোগসহ নানা রকম প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিলবোর্ড, ফেস্টুন- ব্যানার সাঁটিয়েছেন শহরের অলিগলির মোড়ে মোড়ে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের মন জুগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাশার পাশাপাশি অনেকজন নির্বাচনী মাঠ গোছাতেও ব্যস্ত সময় পার করছেন। পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করে প্রার্থীতার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন ভোটারদেরকে।

সচেতন মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রত্যাশী ৬ জন প্রার্থীর দৌঁড়ঝাপ চোখে পড়ার মত। কেন্দ্র পর্যায়ে তাদের শক্ত লবিং অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই লবিং তদবিরে। বিএনপি থেকে দলীয় প্রতীক চান ৪ জন। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির নবীন-প্রবীন ১০জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মনোনয়নযুদ্ধ জমে উঠেছে। তবে জাপায় একক প্রার্থী রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে দলের প্রতীক চান বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র বাবুল হোসাইন, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল আহাদ, আওয়ামী লীগ নেতা শিহাব আহমদ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ তাদের সবার নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। কেন্দ্র থেকেই এখন আসবে দলীয় প্রার্থীর সিদ্ধান্ত।

বিএনপি থেকে দলীয় টিকেটে নির্বাচন করতে চান জকিগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার, পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক বদরুল হক বাদল, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা ও মহিলা দলের নেত্রী সাবেক কাউন্সিলর হোসনে জাহান রীনা।

জাপার একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে চান আব্দুল কুদ্দুছ, স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে রয়েছেন সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম ও পৌর আল ইসলাহর সভাপতি কাজী হিফজুর রহমান।

তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে একই চিত্র। নবীন প্রার্থীরা প্রবীনদেরকে ছাড় দিতে মোটেও রাজি নয়। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলে শেষ পর্যন্ত উভয় দলের একাধিকজন নির্বাচনে লড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিগত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হন। এবারো তিনি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে দৌঁড়ঝাপ করছেন। যেকোন মূল্যে তিনি নৌকা পেতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সাথে পাল্লা দিয়ে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র বাবুল হোসাইন, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল আহাদ, আওয়ামী লীগ নেতা শিহাব আহমদ। তাঁরা কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়।

তবে গোপন সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিনের উপরই ভরসা রাখার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু প্রার্থীতায় পরিবর্তন আনতে ঢাকায় অবস্থান করে শেষ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন দলের টিকেট প্রত্যাশী অন্য নেতারাও।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জকিগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার হঠাৎ করেই পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে বিএনপির প্রতীক চাচ্ছেন। এতে দলের মধ্যে অনেকটা অসন্তুষ বিরাজ করছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ চায়। এরপরও ইকবাল আহমদ প্রতীকের শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সাথে মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন দলের সাবেক মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক বদরুল হক বাদল, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা, মহিলা দলের নেত্রী হোসনে জাহান রীনা। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা ভোটের মাঠে থাকার আভাস দিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টিতে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক। জাপায় তার সাথে আর কোন মনোনয়ন প্রত্যাশী না থাকায় তিনি জাপার দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। খেলাফত মজলিসের দলীয় সিদ্ধান্ত পেলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন আব্দুল কুদ্দুছ।

স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন পৌরসভা আল ইসলাহর সভাপতি কাজী হিফজুর রহমান ও জাফরুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর